মানসিক সমস্যায় নারী-পুরুষ
লেখক: কে. এম. ধ্রুব
আপনি যখন মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশনের অভাবে ভুগবেন তখন মনোবিজ্ঞানীর দারস্থা হবেন। লক্ষ্য করে দেখবেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারে আপনার আশেপাশে যারা আছে তাদের অধিকাংশ নারী। বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বেই এসব সেন্টারে নারীরা সংখ্যাগুরু। তবে কি পুরুষেরা মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশনের অভাবে ভুগে না?
ধরে নেয়া যাক নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগে আর পুরুষেরা কম। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে? পরিসংখ্যান কি বলে? বিগত দু বছরে পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি প্রায় ৩.৫৪ শতাংশ। এমনকি উন্নত বিশ্বের দেশ আমেরিকাতে ৬মিলিয়ন পুরুষ দুশ্চিন্তায় থাকেন। এখানেই শেষ নয় পুরুষের মাদকাসক্তির হার নারীর চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। মদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে যেখানে প্রতি বছর ২৬,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করে, যেখানে প্রায় ৬২,০০০ পুরুষ এই কারণে মারা যায়!
পুরুষের জন্য যে ব্যাপারটা অতি সাধারণ সেই পুরুষেরাই কেনো মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কম যান?
মূলত ব্যক্তিত্ব বা তথাকথিত পৌরুষপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য তারা সমস্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
যদিও আমাদের জেনারেশনের আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি যে, বিষণ্নতা বা অধিকাংশ মানসিক রোগই বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি বা অতিরিক্ত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে, তবুও কেন জানি মেনে নিতে পারছি না! মানসিক রোগের কথা বলাকেই আমাদের সমাজের অনেকাংশেই এখনো মনে করা হয় দুর্বলতার প্রতীক! পুরুষেরা আরো বেশি মনে করে যে মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করা মানে সে দুর্বল! যদিও মানসিক রোগগুলো ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেসারের মতই শুধু আরেকটি রোগ, তবুও এই ব্যাপারে একটা অস্বস্তি কাজ করে !
এই সমস্যাটা ছেলেদের ক্ষেত্রে আরো বেশি, কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছেলেদের এমন ভাবেই গড়ে তোলা হয় যে 'তারা শক্তিশালী','তারা নিজেরাই সব কিছু সমাধান করতে পারে',' তাদের কারো প্রয়োজন নেই'। তাই পুরুষের ক্ষেত্রে নিজের কষ্টের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা আরো বেশী কষ্টকর, এবং সেটাকে ধরা হয় তাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা হিসেবে! সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন, কেন জানি ছেলেদের লজ্জাবোধ এবং নিজের কথা বলে ফেলার পরও অনুতাপ সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া ঠিক সম্ভব হয়ে উঠছে না!
পুরুষদের শুধু মনের ভাব প্রকাশেই নয়, পাশাপাশি সমস্যা হয় সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেও। অধিকাংশ গবেষক এসবকিছুর জন্য দায়ী করেছেন, গতানুগতিক পৌরষত্বকে। আমরা যদি নিজেদের সমাজের দিকেই তাকাই, আপনি চিন্তা করুন ছেলেরা কাদেরকে হিরো হিসেবে দেখে বড় হয়? যারা বলবান, কোন দুর্বলতা নেই, সব কিছুকে একাই সামলে এগিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল জীবন কোন সুপার হিরো মুভি নয়!জীবনের অনেক সমস্যাই সবসময় একা সমাধান করা সম্ভব হয়না, জীবনে সবকিছুই মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখলে কমে যায় না! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে গতানুগতিক শিক্ষার কারণে যে শুধুমাত্র পুরুষেরা বিষণ্নতা শিকার হচ্ছে তা নয়, তারা নারীদের থেকে বেশি সংখ্যক যাচ্ছে মাদকাসক্তির পথে! বলবান পৌরুষত্বের সবকিছুতে অটল থাকার মানসিকতা কারণে, তাদের জীবন হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত!
এখন প্রশ্ন হল, এগুলো সবই তো আমরা জানি, তাহলে আমরা পুরুষদের কথা বলার অস্বস্তি কমাবো কিভাবে? প্রাথমিক ভাবে চিন্তা করলে, অবশ্যই সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনকে স্বচ্ছভাবে কথা বলতে হবে সকল মানসিক সমস্যা, রোগ এবং মাদকাসক্তি নিয়ে।" সমস্যা নিয়ে কথা বলা মানে দুর্বলতা"- এই চিন্তা থেকে আগে নিজেকে বেরিয়ে আসতে হবে, এরপর অন্যকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ থেকেই ছাত্রছাত্রীকে এটি বোঝানো খুব জরুরী যে, মানসিক রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়, এবং এটি সামান্য জ্বর -ঠান্ডা -কাশির মত রোগ!
আমরা বিংশ শতাব্দীতে বসবাস করি, আশেপাশে চিকিৎসার নিত্যনতুন চমৎকার সব উপকরণ তৈরি আছে, শুধুমাত্র আমাদের সেটি নিতে হবে! বাবা-মা- ভাই -বোন- স্বামী -স্ত্রী -বন্ধুর সাথে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলুন, দরকার হলে প্রফেশনালের সহায়তা নিন।
আপনি একবারই বাঁচবেন, চেষ্টা করুন সুস্থ ভাবে বাঁচতে। মন ভাল না থাকলে, আশপাশের আর কোন কিছুই ভালো লাগবে না ; তখন এই পৌরষত্বের ইগোকে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে হবে!
সোর্স:
https://www.healthline.com/health-news/how-can-we-reduce-mens-mental-health-stigma#When-is-it-time-to-ask-for-help?
ধরে নেয়া যাক নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগে আর পুরুষেরা কম। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে? পরিসংখ্যান কি বলে? বিগত দু বছরে পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি প্রায় ৩.৫৪ শতাংশ। এমনকি উন্নত বিশ্বের দেশ আমেরিকাতে ৬মিলিয়ন পুরুষ দুশ্চিন্তায় থাকেন। এখানেই শেষ নয় পুরুষের মাদকাসক্তির হার নারীর চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। মদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে যেখানে প্রতি বছর ২৬,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করে, যেখানে প্রায় ৬২,০০০ পুরুষ এই কারণে মারা যায়!
পুরুষের জন্য যে ব্যাপারটা অতি সাধারণ সেই পুরুষেরাই কেনো মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কম যান?
মূলত ব্যক্তিত্ব বা তথাকথিত পৌরুষপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য তারা সমস্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
যদিও আমাদের জেনারেশনের আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি যে, বিষণ্নতা বা অধিকাংশ মানসিক রোগই বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি বা অতিরিক্ত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে, তবুও কেন জানি মেনে নিতে পারছি না! মানসিক রোগের কথা বলাকেই আমাদের সমাজের অনেকাংশেই এখনো মনে করা হয় দুর্বলতার প্রতীক! পুরুষেরা আরো বেশি মনে করে যে মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করা মানে সে দুর্বল! যদিও মানসিক রোগগুলো ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেসারের মতই শুধু আরেকটি রোগ, তবুও এই ব্যাপারে একটা অস্বস্তি কাজ করে !
এই সমস্যাটা ছেলেদের ক্ষেত্রে আরো বেশি, কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছেলেদের এমন ভাবেই গড়ে তোলা হয় যে 'তারা শক্তিশালী','তারা নিজেরাই সব কিছু সমাধান করতে পারে',' তাদের কারো প্রয়োজন নেই'। তাই পুরুষের ক্ষেত্রে নিজের কষ্টের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা আরো বেশী কষ্টকর, এবং সেটাকে ধরা হয় তাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা হিসেবে! সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন, কেন জানি ছেলেদের লজ্জাবোধ এবং নিজের কথা বলে ফেলার পরও অনুতাপ সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া ঠিক সম্ভব হয়ে উঠছে না!
পুরুষদের শুধু মনের ভাব প্রকাশেই নয়, পাশাপাশি সমস্যা হয় সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেও। অধিকাংশ গবেষক এসবকিছুর জন্য দায়ী করেছেন, গতানুগতিক পৌরষত্বকে। আমরা যদি নিজেদের সমাজের দিকেই তাকাই, আপনি চিন্তা করুন ছেলেরা কাদেরকে হিরো হিসেবে দেখে বড় হয়? যারা বলবান, কোন দুর্বলতা নেই, সব কিছুকে একাই সামলে এগিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল জীবন কোন সুপার হিরো মুভি নয়!জীবনের অনেক সমস্যাই সবসময় একা সমাধান করা সম্ভব হয়না, জীবনে সবকিছুই মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখলে কমে যায় না! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে গতানুগতিক শিক্ষার কারণে যে শুধুমাত্র পুরুষেরা বিষণ্নতা শিকার হচ্ছে তা নয়, তারা নারীদের থেকে বেশি সংখ্যক যাচ্ছে মাদকাসক্তির পথে! বলবান পৌরুষত্বের সবকিছুতে অটল থাকার মানসিকতা কারণে, তাদের জীবন হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত!
এখন প্রশ্ন হল, এগুলো সবই তো আমরা জানি, তাহলে আমরা পুরুষদের কথা বলার অস্বস্তি কমাবো কিভাবে? প্রাথমিক ভাবে চিন্তা করলে, অবশ্যই সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনকে স্বচ্ছভাবে কথা বলতে হবে সকল মানসিক সমস্যা, রোগ এবং মাদকাসক্তি নিয়ে।" সমস্যা নিয়ে কথা বলা মানে দুর্বলতা"- এই চিন্তা থেকে আগে নিজেকে বেরিয়ে আসতে হবে, এরপর অন্যকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ থেকেই ছাত্রছাত্রীকে এটি বোঝানো খুব জরুরী যে, মানসিক রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়, এবং এটি সামান্য জ্বর -ঠান্ডা -কাশির মত রোগ!
আমরা বিংশ শতাব্দীতে বসবাস করি, আশেপাশে চিকিৎসার নিত্যনতুন চমৎকার সব উপকরণ তৈরি আছে, শুধুমাত্র আমাদের সেটি নিতে হবে! বাবা-মা- ভাই -বোন- স্বামী -স্ত্রী -বন্ধুর সাথে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলুন, দরকার হলে প্রফেশনালের সহায়তা নিন।
আপনি একবারই বাঁচবেন, চেষ্টা করুন সুস্থ ভাবে বাঁচতে। মন ভাল না থাকলে, আশপাশের আর কোন কিছুই ভালো লাগবে না ; তখন এই পৌরষত্বের ইগোকে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে হবে!
সোর্স:
https://www.healthline.com/health-news/how-can-we-reduce-mens-mental-health-stigma#When-is-it-time-to-ask-for-help?
Comments
Post a Comment