Skip to main content

গল্প : অদৃশ্য কারাগার | লেখক : কে. এম. নিহাল | ঢাকা মেট্রো-চ


গল্প : অদৃশ্য কারাগার

লেখক : কে. এম. নিহাল


এখন দুপুর ৩:২৩ বাজে আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।সচরাচর এমনটা করি না।তবে আজকে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। গত তিন দিন ধরে আমি এই রুমে আবদ্ধ আছি।তিন বেলার খাবার আর ঔষধ দিয়ে যাওয়া হয় খালি।আমার কাছে বেশ কিছু উপন্যাসের বই আছে। প্রথম দুইদিন সেগুলো পড়েই কাটিয়েছি।কিন্তু এখন আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।একটা ভয়াবহ নিঃসঙ্গটা আমায় গ্রাস করেছে।নিজেকে অনেক একা লাগছে। জানালা দিয়ে দূরের আকাশ দেখছি।এখন জ্বরটাও একটু কম। এই সময়টায় জ্বরটা কম থাকে। আমার এই আবদ্ধ রুমের সাথেই টয়লেট আছে।আমার বাহিরে যাওয়া নিষেধ।আমার থেকে রোগটা আরেক জনে সংক্রমিত হতে পারে।এমনকি আমার এই ঘরের জানালাও বন্ধ।আমাকে কৃত্তিম উপায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।আমি জানালার পাশে একটা ইজি চেয়ারে বসে আছি।আমাকে একটু আগে দুপুরের খাবার আর ঔষধ দিয়ে যাওয়া হয়েছে।আমি এখনো খাবার আর ঔষধ খাইনি।খেতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে আমার মা প্রতিদিন বলতো,“বাবা রাতুল খেতে আয়।ভাত বেরেছি।”।এখন আর কেউ বলে না।আমার পরিবারের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।আমাকে একটা মোবাইলও দেওয়া হয়নি।এখন মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মায়ের কথা মনে পড়তেই এক ফোঁটা অশ্রুজল গরিয়ে পড়ল।মা নিশ্চয়ই আমার কথা ভাবছে।আমাকে ছাড়া অনেক দিন না খেয়ে আছে।মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে আমি আকাশে দিকে তাকিয়ে আছি।আমাকে রাখা হয়েছে একটা আটতলা ভবনের ছয় তলায় কোয়ারেন্টাইনে।আমাকে ঔষধ বলতে শুধু নাপা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে এখনো এই রোগের প্রতিষেধক তৈরি হয়নি।আমি জ্বরটা বেড়ে গেলেই নাপা খাই।তাছাড়া খাইনা।আমি খাবার, ঔষধ খাচ্ছি নাকি এটা দেখার মতো কেউ নেই এখানে।আমি জানি যে আমি একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।জানালা দিয়ে নিচে তাকালে একে বারেই ফাঁকা রাস্তা ঘাট দেখা যায়।রাস্তায় একটা কুকুরও নাই।আমার কাছে কিছু নোট খাতা আছে কিন্তু কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না।আমার রুমে একটা টিভি আছে কিন্তু সেটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না।মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আনন্দ লাভের ইচ্ছা নিছকই বোকামি।  তবুও আনন্দিত কিছু মুহুর্তের পরশ মেখে চলে যেতে চাই অনন্তপানে।তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। শুনেছি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমি সেটা পাচ্ছি না।তবুও মৃত্যুর আগের দিনগুলো আনন্দে কাটাতে চাই।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইজি চেয়ার টা থেকে উঠে দাড়ালাম।এবার খাটের ওপর গিয়ে শুয়ে পড়লাম।আবার জ্বর আসছে।উঠে গিয়ে আবার নাপাটা খেলাম।আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।খুব দূর্বল লাগছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে  একটা নিশ্বাস ফেললাম।চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছে।আমি চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম।ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখলাম আমি কোনো এক সবুজ অনিকেত প্রান্ত বিস্তৃত খোলা মাঠের মাঝে হাটছি.....।এমন সময় ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত আটটা বাজে। আমি উঠে গিয়ে হাত মুখ পরিষ্কার করে দুপুরের খাবারটা খেলাম।খাওয়া শেষ করে আবার জানালার পাশে দাড়ালাম।বাহিরে রাস্তায় সোডিয়াম বাতিগুলো জ্বলছে।আকাশের মিটমিট করে জ্বলছে।এরকম সময় আমি বাড়ির ছাদে বসে তারা দেখতাম আর এখন আমি এই বদ্ধ কামরায় বন্দী। নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি ট্রাকের তলে পিষে যাওয়া পিঁপড়া। 

গত সাতদিন আগে যাদের সাথে মিশেছি,দেখা করেছি,কথা বলেছি এখন তারা কেউ পাশে নেই।

যেই বন্ধুর সাথে বাইকে ঘুরেছি,যেই বান্ধবীর চশমাটা নিয়ে স্যারের মত ভাব নিয়েছি।যাদের ছাড়া আমার এক মূহুর্ত কাটতো না যাদের অস্তিত্ব ছাড়া আমি নিজেকে খুজে পাই না এই পৃথিবীতে, তাদের কারো কারো সাথে আসার আগে শেষ দেখাটাও করা হয়নি

 যেই দোকান থেকে চা খেয়েছি,যেই রিকশায় ঘুরেছি,যে চাচার দোকানে বসে বন্ধুরা আড্ডা দিয়েছি দিনের পর দিন  তাদের কাউকে আর খুঁজে পাবো কিনা জানি না।বাবা-মা পরিবার আর খুব বেশি কাছের মানুষজনকে নিয়ে আমি আর গল্প করতে পারি  কি না জানি না।আমার শরীর অবশ হয়ে যায়,বমি আসে, কান্না পায়,আমি কাঁদতে পারি না। চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। 

আমি নিজে টিকে থাকতে চাই না।শুধু চাই আমার আশেপাশের সবাই ভালো থাকুক।শুধু নিজের লোক না, সবাই,সবাই,সব্বাই.......

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মানসিক সমস্যায় নারী-পুরুষ | ঢাকা মেট্রো চ

মা ন সিক সমস্যায় না রী-পুরুষ লেখক: কে. এম. ধ্রুব আপনি যখন মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশনের অভাবে ভুগবেন তখন মনোবিজ্ঞানীর দারস্থা হবেন। লক্ষ্য করে দেখবেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারে আপনার আশেপাশে যারা আছে তাদের অধিকাংশ নারী। বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বেই এসব সেন্টারে নারীরা সংখ্যাগুরু। তবে কি পুরুষেরা মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশনের অভাবে ভুগে না? ধরে নেয়া যাক নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগে আর পুরুষেরা কম। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে? পরিসংখ্যান কি বলে? বিগত দু বছরে পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি প্রায় ৩.৫৪ শতাংশ। এমনকি উন্নত বিশ্বের দেশ আমেরিকাতে ৬মিলিয়ন পুরুষ দুশ্চিন্তায় থাকেন। এখানেই শেষ নয় পুরুষের মাদকাসক্তির হার নারীর চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। মদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে যেখানে প্রতি বছর ২৬,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করে, যেখানে প্রায় ৬২,০০০ পুরুষ এই কারণে মারা যায়! পুরুষের জন্য যে ব্যাপারটা অতি সাধারণ সেই পুরুষেরাই কেনো মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কম যান? মূলত ব্যক্তিত্ব বা তথাকথিত পৌরুষপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য তারা সমস্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। যদিও আমাদের জেনারেশনের আমরা বেশিরভাগ মানুষই...