-পৃথিবিতে সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। সব ভালোবাসায় কোনও না কোন ধান্ধা আছেই। এইযে যেসব ছেলেরা বলে যে আমি তোমার রুপ দেখে নই, মন দেখে ভালোবেসেছি। বিশ্বাস কর দোস্ত, এইগুলার চেয়ে বড় ভণ্ড আর একটাও নাই পৃথীবিতে।
আমি সারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। আমি জানি, ঠিক দুইদিন পর এই মেয়েটাই এসে আমাকে বলবে;
-দোস্ত, তোর সাথে একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।
-কি কথা.!
-এখানে না, চল সামনের ক্যাফেটেরিয়াতে।
আমাদের ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়াটা অন্য আটদশটা ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ার মত না। এটার খাবারের মানও যেমন ভালো, কাপলদের জন্যও নিরিবিলি প্রেম করার জন্য আদর্শ। আমরা গিয়ে মোটামুটি সামনের দিকের একটা টেবিলে বসলাম। আশেপাশে কাপলদের ভিড়ে তাকানোটা দায়।
-কি খাবি বল, বার্গার না পিজ্জা.!
-পাস্তা।
সারা তিনটা পাস্তার অর্ডার দিল।
-কি ইম্পোর্টেন্ট কথা এবার বল।
-দোস্ত, একটা ছেলের সাথে কথা হয় কিছুদিন ধরেই। ছেলেটা না এত্তো ভালওওও, আর আমার এত্ত এত্ত কেয়ার নেয়, আমি জাস্ট ফিদা হয়ে গেছি ওর উপর। সবচেয়ে বড় কথা শুভ আট দশটা ছেলের মতো নোংরা না, অনেক ভালো একটা ছেলে।
-রিফাতের বেলায়ও একিই কথা বলেছিলি, তাহলে ওর সাথে ব্রেকআপ হলো কেন.?
-আরে ধুর, কে জানতো যে ও এমন লুই** এজ এ বয়ফ্রেন্ড হিসেবে একটু কিস টিস করবি ভালো কথা, তাই বলে একেবারে রুমডেট.!! আমাকে কি তোর রাস্তার মেয়ে মনে হয়.?
কথা বলতে বলতে সারা উত্তেজিত হয়ে পরে। আমি হাসতে থাকি ওর রাগ দেখে। একটু পর শুভ আসে। ওরা একে অপরের কোমর জড়িয়ে ধরে বসে বসে গল্প করতে থাকে। আমি বের হয়ে আসি ক্যাফেটেরিয়া থেকে।
তানিয়া আপা ফোন করেছে। আপা হলো আমাদের পরিবারের সবথেকে বড় আর সবাইর আদরের। চাচ্চু অনেক ভালো ঘরের সম্বন্ধ এনেছিল আপার জন্য, আপা না করে দিয়েছিলো। বলেছিলো;
-টাকা দিয়ে হবে কি হবে.? ভালোবাসাটাই আসল। ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকলে কোন কিছুর অভাবই অভাব লাগে না।
চাচ্চু তানিয়া আপার ভালোবাসার মানুষের সাথেও আপার বিয়ে দেন। বিয়ের দুই বছরের মাথায় আপা ব্যাগ গুছিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জম্ম হওয়া তানিয়া আপা স্বামীর অভাবের সংসারের ভার সামলাতে পারছিলেন না। চাচ্চু চাচীমা বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার পাঠায় স্বামীর বাড়ি। সে থেকে আমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। সেই তানিয়া আপা ফোন করেছে।
-আপা কেমন আছো তুমি.!
-আর ভালো থাকলাম কোথায়.! বেচে আছি নাকি মরে গেছি কোনদিন খবর ও তো নিলি না।
আপার কন্ঠে কপট রাগ ঝরে পরে।
-সরি আপা, আচ্ছা আয়রা মামুণি কেমন আছে.?
-হুম ভালোই আছে। এখন যা পাকনা পাকনা কথা বলে.! এবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবো ভাবছি।
-ভালো। দুলাভাই কেমন আছে.?
-তোর দুলাভাই এর কথা আর বলিস না। ব্যবসা নিয়ে এত ব্যস্ত যে মেয়ে আর বউয়ের কথা মনেই থাকে না তার। কে বলেছে তাকে এতো টাকা কামাই করতে.? আমি তো টাকা চাইনি, চেয়েছি ভালোবাসা। অথচ কি পেলাম.!
আমি আপার কথায় হাসি। মানুষ বড্ড অদ্ভুত প্রাণী। এরা কখন কি চায়, তা নিজেরাই জানে না। আমি ফোন রেখে দিয়ে হাটতে থাকি। শহরের বুকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গায়ে শীত শীত অনুভূত হলেও পাত্তা দিতে ইচ্ছে করছে না। অনেককাল আগে কেউ একজন গায়ে গরম কাপড় না দিলে খুব রাগতো। এখন আর অন্যকারো উপর রাগে কিনা জানা নেই। জানতে ইচ্ছেও করে না। তাকে ছাড়া হয়তো ভালো নেই, কিন্তু খারাপও নেই। জীবন চলে যাচ্ছে, যেতে যেতে থেমে যায় ধানমণ্ডি আটে। দুই বুড়ো-বুড়ি মাটির চুলায় পিঠা বানিয়ে বিক্রি করছে।
-চাচা, আমাকে একটা পিঠা দেন শুটকি ভর্তা দিয়ে।
চাচা একটা কাগজে পিঠা এগিয়ে দিলো। আমি পিঠা খেতে লাগলাম। ভর্তাটা অসাধারণ হয়েছে। চাচীকে বলতে যাবো ঠিক সেসময় দেখলাম চাচী "আও" বলে চিৎকার করে উঠলো। চাচা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল:
চাচা: কি হইছে.?
চাচী: কিছু না। ওই একটু তাপ লাগছে হাতে আগুনের।
চাচা: একটু দেইখা কাম করন লাগে। অহন যদি হাতটা পুইড়তো, তহন কি হয়তো.?
চাচী: আরে আন্নে হুদাই টেনশন করেন। আন্নে থাকতে আর কিতা হইবো.!
চাচা: হ বুজছি, এহন দেইখা কাম করো।
চাচী মুচকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে আবার পিঠা ভাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি টাকা দিয়ে চলে উঠে আসলাম সেখান থেকে। নাহঃ তারা সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটা জানে না।
নয়তো,
আমাদের শেখার অনেক কিছু ছিল তাদের কাছ থেকে।
Comments
Post a Comment